বহুল আলোচিত জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আজই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসতে পারে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা চলছে। এ উদ্দেশ্যে দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। তার আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক আহ্বান করেছেন।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!সরকারঘনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে শুধু জুলাই সনদের বাস্তবায়নের তারিখ বা রূপরেখাই নয়, একইসঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হতে পারে। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে সৃষ্ট বিরোধ ও অচলাবস্থার একটি সমঝোতামূলক সমাধানও এই ঘোষণায় উঠে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিরোধ থেকে সমঝোতার পথে?
গত কয়েকদিন ধরে গণভোট ও জুলাই সনদ নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। প্রতিটি দলই অপর দলকে দোষারোপ করেছে, কারও বক্তব্যে ছাড় দেওয়ার ভাষা ছিল না।
মূল দ্বন্দ্বটি তৈরি হয়েছে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা দলগুলোর দেওয়া আনুষ্ঠানিক আপত্তিকে কেন্দ্র করে। জুলাই সনদের মোট ৮৪টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬১টি প্রস্তাবে অন্তত একটি বা একাধিক দলের আপত্তি রয়েছে। তার মধ্যে মৌলিক ২০টি প্রস্তাবের ৯টিতেই বিএনপির আপত্তি আছে।
জামায়াত শুরুতে গণভোটের সময়সূচি নিয়ে আপত্তি জানালেও, সূত্র বলছে শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনের দিন গণভোট মেনে নিতে রাজি হয়েছে।
কোন কোন প্রস্তাবে আপত্তি রয়েছে? (নোট অব ডিসেন্ট বিশ্লেষণ)
ইস্যু কোন দল আপত্তি দিয়েছে সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন পিআর পদ্ধতিতে বিএনপি রাষ্ট্রপতি বনাম প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য এবং স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ। বিএনপি একই ব্যক্তি দলপ্রধান, প্রধানমন্ত্রীর ও সংসদনেতা থাকবেন না বিএনপি আইনজীবীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিষিদ্ধ বিএনপি স্থানীয় সরকারের আর্থিক স্বাধীনতা জামায়াত স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণে আনা জামায়াত নারীর সংরক্ষিত আসনে কাঠামোগত পরিবর্তন চরমোনাই ও খেলাফত নেজামে ইসলাম এনসিপি কোনো আপত্তি দেয়নি
বিএনপির অভিযোগ – ‘সনদ বদলে দেওয়া হয়েছে’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, ঐকমত্য কমিশন দলগুলোর সম্মতি ছাড়া সনদের কিছু অংশ পরিবর্তন করেছে। তিনি দাবি করেন
নোট অব ডিসেন্টগুলো সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, অফিস-আদালত থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি সরানোর সিদ্ধান্তে সবাই একমত হলেও তা সনদে রাখা হয়নি,
আরো কিছু সুপারিশ যেমন ২৭০ দিনের মধ্যে সংসদ সিদ্ধান্ত না নিলে সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে, এসব বিষয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি।
ফলে বিএনপির মতে, এটি “দেশ ও জাতির সঙ্গে প্রতারণা”।
জামায়াতের পাল্টা বক্তব্য ‘বিএনপি স্বৈরাচার হতে চায়!’
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, বিএনপি যেসব প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে, তা তাদের স্বৈরাচারী মানসিকতার পরিচায়ক। তার ভাষায়।
“৩১টি দল যখন সংস্কারের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ, তখন বিএনপি সনদে সই করার পরও বাস্তবায়ন ঠেকাতে চাইছে। কেউ ওদের জোর করে সই করায়নি। এখন তারা পিছিয়ে আসার চেষ্টা করছে।”
জামায়াত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগেই হোক বা নির্বাচনের দিনেই হোক, তারা সংস্কারের পক্ষে কোনো আপস করবে না।
এনসিপির অবস্থান ‘দুই দলই সংকট তৈরি করছে’
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে মৌলিক সংস্কারগুলো আটকে দিতে চাইছে, আর জামায়াত নির্বাচন পেছানোর কৌশল করছে কিনা তা নিয়েও জনমনে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।
তিনি মনে করেন, গণভোট নির্বাচন দিবসে বা তার আগেও হতে পারে, যদি সব রাজনৈতিক পক্ষ আইনি কাঠামোতে একমত হতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করেন “বিএনপি ও জামায়াতকে সংঘাতে যেতে দেওয়া হলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।”
সনদ বাস্তবায়নের কাঠামো (কীভাবে বাস্তবায়িত হবে?)
ঐকমত্য কমিশন মোট ৮৪টি সুপারিশ দিয়েছে, যার মধ্যে ৯টি বাস্তবায়ন হবে নির্বাহী আদেশে, ২৭টি অধ্যাদেশের মাধ্যমে, ৪৮টি সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব গণভোটে উত্থাপিত হবে।
পরবর্তী সংসদের ওপর থাকবে দুইটি প্রধান দায়িত্ব:
১. সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন,
২. নিয়মিত আইনসভা হিসেবে কাজ করা।
সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবগুলো ২৭০ দিনের মধ্যে সংসদে পাস না হলে, সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। এরপর ৪৫ দিনের মধ্যে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। সবকিছুর আইনি কাঠামো দাঁড়াবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ নামে একটি গেজেট আদেশের মাধ্যমে।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণাগুলো এলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন এবং সংবিধান সংস্কারের ভবিষ্যৎ পথ অনেকটাই পরিষ্কার হবে। চোখ এখন সরকারের চূড়ান্ত বক্তব্যের দিকে ঘোষণা কি ঐক্যের পথ খুলবে, নাকি নতুন বিতর্কের জন্ম দেবে সেটাই দেখার বিষয়।
দৈনিক টার্গেট 























