দেশের বিভিন্ন উপজেলায় সমাজসেবা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভাতার তালিকা প্রণয়ন, অনুদান বণ্টন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ভাতার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ঘুষ নেওয়া হচ্ছে এবং দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে দায়িত্বে থেকে অনেক কর্মকর্তা হয়ে উঠেছেন স্বেচ্ছাচারী।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, সমাজসেবা অফিসের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ৮ থেকে ১০ বছর একই উপজেলায় থেকে নানা অনিয়ম করছেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এসব অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন তাঁরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কিছু কর্মকর্তা প্রথম শ্রেণির হলেও নিয়মিত হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন না। কেউ কেউ আবার ইচ্ছেমতো অফিসে আসেন ও যান। এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
নেত্রকোনায় বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাত
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচিতে ২২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, পল্লী মাতৃকেন্দ্রে ৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি খাতে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। গত বছর আগস্ট থেকে কর্মকর্তা উধাও রয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তাকে চাকরিচ্যুত করা হলেও আত্মসাৎ করা অর্থ পুনরুদ্ধারে কোনো মামলা হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সাতক্ষীরায় ভুয়া বিল-ভাউচারে কোটি টাকার কারসাজি
সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও কলারোয়া উপজেলায় সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ আরিফুজ্জামানের বিরুদ্ধে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। গোলাম রহমান নামের এক ব্যক্তি লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষয়ক্ষতির মিথ্যা তথ্য দেখিয়ে গত অর্থবছরে ১০ লাখ টাকার বেশি বরাদ্দ নেওয়া হয়, যার বেশিরভাগই ভুয়া বিল-ভাউচারে তুলে নেওয়া হয়েছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, ক্যানসার রোগীদের অনুদান দেওয়ার জন্য অনলাইন নিবন্ধনে ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। এমনকি যেসব রোগী অনুদান পেয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকেও চেক দেওয়ার আগে ২৫ হাজার টাকা করে ঘুষ নেওয়া হয়। এসব কর্মকাণ্ডে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রোকনুজ্জামানও সম্পৃক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তবে অভিযুক্ত আরিফুজ্জামান ও রোকনুজ্জামান দুজনেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রোকনুজ্জামান বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমার ১৯ বছরের চাকরি জীবনে অনেক অভিযোগ দেওয়া হলেও কোনোটি তদন্তে প্রমাণিত হয়নি। এবারও হবে না বলে আশা করছি।”
সিংগাইরে অফিসে অনিয়ম, কর্মকর্তা-সহকর্মীর দ্বন্দ্ব
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জোবায়দা গুলশান আরার বিরুদ্ধে অধীনস্থদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও অফিসে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি প্রায় সাড়ে আট বছর ধরে একই উপজেলায় দায়িত্ব পালন করছেন এবং নিয়মিত দুপুরে অফিসে আসেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সহকর্মীদের বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন।
তবে জোবায়দা গুলশান আরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার কিছু সহকর্মী নিয়ম ভঙ্গ করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর প্রতিশোধ নিতে তারাই মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন।”
অন্যদিকে, তার সহকর্মী ডা. মনিরা সুলতানা অভিযোগ করেন, “গুলশান আরা আমার বদলির জন্য মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছেন।” আর ডা. হাকিম নামের এক কর্মকর্তা দাবি করেন, “আমি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা; হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক নয়।”
সচিবের সতর্ক বার্তা
সমাজকল্যাণ সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউছুফ বলেন, “মাঠ পর্যায়ে সমাজসেবা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন একই জায়গায় দায়িত্ব পালন ও তদারকির ঘাটতির কারণে সমাজসেবা বিভাগে স্বেচ্ছাচারিতা বাড়ছে। ফলে প্রকৃত উপকারভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন, আর কিছু অসাধু কর্মকর্তা জনগণের টাকা লুটপাটে ব্যস্ত।