দেশে অবৈধ ও নকল মোবাইল ফোন বন্ধে বড় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে চালু হচ্ছে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) নামের একটি নতুন সিস্টেম, যার মাধ্যমে শুধুমাত্র বৈধভাবে আমদানি করা ও অনুমোদিত মোবাইল ফোনই দেশের নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে পারবে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে দেখা গেছে দেশের প্রায় ৭৩ শতাংশ ডিজিটাল প্রতারণা ঘটে অবৈধ ডিভাইস ও সিম ব্যবহারের মাধ্যমে। নতুন এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, বর্তমানে অবৈধ হ্যান্ডসেটের কারণে সরকার প্রতিবছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারায়। এনইআইআর চালুর মাধ্যমে এ ক্ষতি বন্ধ করা এবং অবৈধ মোবাইল বাজার নিয়ন্ত্রণই এর মূল লক্ষ্য।
মোবাইল কেনার আগে যা যাচাই করবেন
১৬ ডিসেম্বর থেকে নতুন ফোন কেনার আগে গ্রাহককে অবশ্যই ফোনটির বৈধতা নিশ্চিত করতে হবে। ফোনটি বৈধ হলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এনইআইআর ডাটাবেইসে নিবন্ধিত হয়ে যাবে।
যেভাবে যাচাই করবেন:
১. মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখুন – KYD <space> আইএমইআই নম্বর (১৫ ডিজিট)
২. বার্তাটি পাঠান ১৬০০২ নম্বরে
৩. কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরতি এসএমএসে জানানো হবে ফোনটি বৈধ নাকি অবৈধ
ফোন কেনার পর অবশ্যই ক্রয় রশিদ সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে তা প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
বিদেশ থেকে কেনা বা উপহার পাওয়া ফোনের নিবন্ধন
বিদেশ থেকে বৈধভাবে কেনা বা উপহার পাওয়া ফোন দেশে নিয়ে এলে তা প্রাথমিকভাবে নেটওয়ার্কে চালু থাকবে। এরপর গ্রাহককে ৩০ দিনের মধ্যে অনলাইনে প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিতে হবে।
নিবন্ধনের ধাপসমূহ:
১. ভিজিট করুন neir.btrc.gov.bd
২. নিজের অ্যাকাউন্ট খুলে ‘Special Registration’ সেকশনে যান
৩. ফোনের আইএমইআই নম্বর লিখুন
৪. পাসপোর্ট, ভিসা, ক্রয় রশিদ ইত্যাদি ডকুমেন্ট আপলোড করে সাবমিট করুন
যাচাই শেষে ফোনটি বৈধ হলে তা নেটওয়ার্কে সক্রিয় থাকবে। অবৈধ প্রমাণিত হলে গ্রাহককে এসএমএসে জানিয়ে সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
নিবন্ধিত ফোন বিক্রি বা হস্তান্তর করতে হলে
যদি কোনো ব্যবহারকারী তার ব্যবহৃত মোবাইল বিক্রি বা অন্যের কাছে দিতে চান, তাহলে আগে সেটি ‘ডি-রেজিস্ট্রেশন’ করতে হবে।
যেভাবে করবেন:
সিটিজেন পোর্টাল: neir.btrc.gov.bd
মোবাইল অ্যাপ বা ইউএসএসডি কোড: *16161#
অথবা অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে যোগাযোগ করে
ডি-রেজিস্ট্রেশনের সময় ব্যবহারকারীর এনআইডির শেষ চার ডিজিট দিতে হবে এবং সিমটি অবশ্যই তার নিজের নামে নিবন্ধিত হতে হবে।
করপোরেট সিম ব্যবহারকারীদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা
করপোরেট সিমধারীরা এসএমএসের মাধ্যমে ৩০ দিনের মধ্যে তাদের ব্যক্তিগত এনআইডি তথ্য দিতে পারবেন। তা না হলে শুধুমাত্র কোম্পানির অনুমোদিত কি-কন্টাক্ট-পয়েন্টের (KCP) এনআইডি দিয়েই ডি-রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।
হারানো বা চুরি হওয়া ফোন ব্লক করার পদ্ধতি
যদি কোনো মোবাইল চুরি যায় বা হারিয়ে যায়, গ্রাহক সিটিজেন পোর্টাল, মোবাইল অ্যাপস অথবা অপারেটরের গ্রাহকসেবা কেন্দ্র থেকে সেটি তাৎক্ষণিকভাবে লক বা আনলক করতে পারবেন।
ইন্টারনেটবিহীন গ্রাহকদের জন্য বিকল্প উপায়
যেসব গ্রাহকের ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তারা ইউএসএসডি চ্যানেল (*16161#) অথবা ১২১ নম্বরে কল করে অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার থেকে এনইআইআর সম্পর্কিত যেকোনো সেবা নিতে পারবেন।
এনইআইআর চালুর লক্ষ্য
এনইআইআর ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো-
অবৈধ ও নকল ফোন বন্ধ করা
ডিজিটাল জালিয়াতি রোধ করা
সরকারকে রাজস্ব ক্ষতি থেকে রক্ষা করা
এবং গ্রাহকদের নিরাপদ মোবাইল ব্যবহার নিশ্চিত করা
সংক্ষেপে বলা যায়, ১৬ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশে কেবল বৈধ ও অনুমোদিত ফোনই সচল থাকবে। অবৈধ বা ক্লোন করা ডিভাইসগুলো নেটওয়ার্কে আর কাজ করবে না।
দৈনিক টার্গেট 























