বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ভারতে পলাতক অবস্থায় থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফেরত চেয়ে নয়াদিল্লির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠিয়েছে ঢাকা। সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন রোববার নিশ্চিত করেন যে গত ২১ নভেম্বর পাঠানো ওই অনুরোধের বিষয়ে এখনো ভারতের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ভারতীয় সরকারও প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!তবে আনুষ্ঠানিক নীরবতা বজায় রাখলেও পরিস্থিতিকে ঘিরে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের বিশ্লেষণ সামনে আসতে শুরু করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে-ভারত বর্তমানে হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে অনাগ্রহী, কারণ তাকে দেশে পাঠানো হলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নয়াদিল্লি মনে করছে।
দীর্ঘদিনের আঞ্চলিক মিত্র হারানোর শঙ্কা
সিএনএনের বিশ্লেষণে বলা হয়, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন শেখ হাসিনা। তার শাসনামলে বাংলাদেশ ভারতের বিরুদ্ধে সক্রিয় বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়, যা নয়াদিল্লির নিরাপত্তা স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও একাধিকবার সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষায় হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করেছেন।
কিন্তু ক্ষমতাচ্যুতির পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তন ভারতের কাছে নতুন নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি করেছে। নয়াদিল্লির ধারণা-হাসিনার সরকারের পতনের পর ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো আবার সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে, যা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং সীমান্ত এলাকায় অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।
প্রত্যর্পণ প্রশ্নে সন্দেহ
বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করা ভারতের সাবেক কূটনীতিক অনিল ত্রিগুণায়েত মনে করেন, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করার সম্ভাবনা খুব কম। তার মতে, ভারতের কাছে পরিস্থিতি এখন রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত জটিল। তিনি বলেন, নয়াদিল্লি এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইবে না, যার ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠতে পারে।
এদিকে শেখ হাসিনা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোকে আগের মতোই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এ দাবি ভারতকে একটি যুক্তিগ্রাহ্য অবস্থান তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে-যে অভিযোগগুলো রাজনৈতিক এবং তাই প্রত্যর্পণ জটিল।
বাংলাদেশের প্রত্যাশা-আইন ও চুক্তির ভিত্তিতে প্রত্যর্পণ
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, দুই দেশের বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তি এবং ভারতীয় আইনের বিধান মেনে তারা এই দুটি উচ্চপ্রোফাইল মামলার বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে প্রত্যাশা করছে। তবে ভারত কী সিদ্ধান্ত নেবে, তা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।
পরিস্থিতি আপাতত অচলাবস্থায় হলেও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন-দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, যা দু’দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যতকেও প্রভাবিত করতে পারে।
দৈনিক টার্গেট 














