প্রাচীন মিশরের ৭ হাজার বছরের ইতিহাস, তুতেনখামুনের সম্পূর্ণ সমাধি ও রামেসিস দ্য গ্রেটের বিশাল মূর্তি সব এক ছাদের নিচে

গিজায় খুললো বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাদুঘর ‘জিইএম’

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ১২:৫৭:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫
  • ৪৬ বার পঠিত হয়েছে

মিশরের গিজা পিরামিডের পাশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে ‘দ্য গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম’ সংক্ষেপে জিইএম। প্রাচীন বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একেবারে নিকটেই দাঁড়িয়ে থাকা এই জাদুঘর এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রত্নতাত্ত্বিক প্রদর্শনী কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

প্রায় এক লাখেরও বেশি নিদর্শন নিয়ে এটি গড়ে উঠেছে এক বিশাল সাংস্কৃতিক ভাণ্ডার হিসেবে।

সাত হাজার বছরের ইতিহাস এক ছাদের নিচে

জিইএম-এ স্থান পেয়েছে মিশরের প্রাক-রাজবংশীয় যুগ থেকে গ্রীক ও রোমান আমল পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার বছরের ঐতিহ্য। প্রাচীন সভ্যতার বিবর্তন, ধর্ম, শিল্প ও রাজনীতির ধারাবাহিকতা এখানে এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেন দর্শক সময়ের সিঁড়ি বেয়ে ফিরে যান কয়েক হাজার বছর পেছনে।

তুতেনখামুনের সম্পূর্ণ সমাধি প্রথমবার উন্মুক্ত

এই জাদুঘরের সবচেয়ে আলোচিত অংশ হলো প্রাচীন মিশরের বালক রাজা তুতেনখামুনের সমাধি থেকে উদ্ধার হওয়া পূর্ণ সংগ্রহ
১৯২২ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার যে সমাধিটি আবিষ্কার করেছিলেন, তার ভেতরের প্রায় ৫,৫০০ প্রত্নবস্তু প্রথমবারের মতো একই স্থানে প্রদর্শিত হচ্ছে এখানে। সোনার মুখোশ, রাজকীয় সিংহাসন, অলঙ্কার, রথ সব কিছু এমনভাবে সাজানো যে দর্শনার্থীরা যেন শত বছর আগের সেই ঐতিহাসিক আবিষ্কার মুহূর্তটি চোখের সামনে দেখতে পান।

জাদুঘরের সাবেক প্রধান ড. তারেক তওফিক বলেন, “আমরা চাই মানুষ যেন তুতেনখামুনের সমাধি দেখতে পান ঠিক যেভাবে হাওয়ার্ড কার্টার প্রথম দেখেছিলেন—অক্ষত ও অবিকল অবস্থায়।”

নির্মাণে দুই দশকের প্রচেষ্টা

জিইএম-এর প্রস্তাব দেওয়া হয় ১৯৯২ সালে, আর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে। একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তি আর প্রাচীন শিল্পের সংমিশ্রণে তৈরি এই স্থাপনাটি শেষ হতে সময় লেগেছে প্রায় দুই দশক। ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি মার্কিন ডলার। জাদুঘরটির আয়তন প্রায় পাঁচ লাখ বর্গমিটার, যা প্রায় ৭০টি ফুটবল মাঠের সমান। প্রবেশপথটি পিরামিড আকৃতির, দেয়ালে খোদাই করা হয়েছে প্রাচীন মিশরীয় হায়ারোগ্লিফ, আর পুরো ভবনজুড়ে অ্যালাবাস্টার পাথরের ত্রিভুজাকার নকশা স্থাপত্যে এনেছে অনন্য এক আভিজাত্য।

Google News দৈনিক টার্গেটের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল

রামেসিস দ্য গ্রেট ও প্রাচীন রাজাদের উপস্থিতি

প্রবেশের পরই চোখে পড়ে ১১ মিটার উঁচু রামেসিস দ্য গ্রেটের মূর্তি, যেটি ২০০৬ সালে কায়রোর রেলস্টেশন থেকে সরিয়ে এখানে আনা হয়।
‘গ্র্যান্ড স্টেয়ারকেস’ বা বিশাল সিঁড়ির দুই পাশে সাজানো আছে মিশরের অন্যান্য রাজা-রানীর ভাস্কর্য, আর উপরের তলা থেকে দর্শকরা সরাসরি দেখতে পারেন গিজা পিরামিডের অপূর্ব দৃশ্য।

পর্যটন ও অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জাদুঘর বছরে অন্তত আট মিলিয়ন পর্যটক আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে। এর ফলে মিশরের পর্যটন খাত নতুন প্রাণ পাবে।
একই সঙ্গে, জিইএম মিশরের নিজস্ব ঐতিহ্য বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনার দাবিকেও আরও জোরদার করেছে। অনেক গবেষকই মনে করছেন, ব্রিটিশ মিউজিয়ামে থাকা ‘রোসেট্টা স্টোন’ ফেরত আনার আন্দোলন এখন নতুন গতি পাবে।

পিরামিডের পাশে সভ্যতার নতুন প্রতীক

জিইএম-এর স্থাপত্য এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে এটি গিজার তিনটি পিরামিডের সাথে একই সরলরেখায় দাঁড়িয়ে আছে। সূর্যাস্তের সময় পিরামিড আর জাদুঘরের কাঁচে প্রতিফলিত সোনালি আভা যেন প্রাচীন ও আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটায়।

সংস্কৃতি ও উত্তরাধিকার রক্ষায় নতুন ধারা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলছেন, এই জাদুঘর শুধু ইতিহাস প্রদর্শনের স্থান নয় এটি মিশরের সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের নতুন কেন্দ্রবিন্দু। আধুনিক সংরক্ষণ প্রযুক্তি, ডিজিটাল ইন্টারঅ্যাকটিভ গ্যালারি এবং শিক্ষা-গবেষণার সুযোগ এটিকে করেছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক জীবন্ত পাঠশালা।


সংক্ষেপে বলা যায়
দ্য গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম শুধু একটি ভবন নয় এটি সময়ের সেতুবন্ধন। গিজার বালুকায় দাঁড়িয়ে থাকা এই স্থাপনা মিশরের হাজার বছরের গৌরব, রাজত্ব আর রহস্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। প্রাচীন সভ্যতার উত্তরাধিকার এখন নতুন রূপে উন্মুক্ত হলো, যা একদিকে ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যদিকে ভবিষ্যতের জন্য প্রেরণা।

WhatsApp

আমাদের WhatsApp চ্যানেল ফলো করুন

ফলো করুন

দৈনিক টার্গেট

আমাদের ফেসবুক পেজটি ফলো করুন সর্বশেষ খবর পেতে।

ফলো করুন

প্রাচীন মিশরের ৭ হাজার বছরের ইতিহাস, তুতেনখামুনের সম্পূর্ণ সমাধি ও রামেসিস দ্য গ্রেটের বিশাল মূর্তি সব এক ছাদের নিচে

গিজায় খুললো বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাদুঘর ‘জিইএম’

প্রকাশ: ১২:৫৭:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫

মিশরের গিজা পিরামিডের পাশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে ‘দ্য গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম’ সংক্ষেপে জিইএম। প্রাচীন বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একেবারে নিকটেই দাঁড়িয়ে থাকা এই জাদুঘর এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রত্নতাত্ত্বিক প্রদর্শনী কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

প্রায় এক লাখেরও বেশি নিদর্শন নিয়ে এটি গড়ে উঠেছে এক বিশাল সাংস্কৃতিক ভাণ্ডার হিসেবে।

সাত হাজার বছরের ইতিহাস এক ছাদের নিচে

জিইএম-এ স্থান পেয়েছে মিশরের প্রাক-রাজবংশীয় যুগ থেকে গ্রীক ও রোমান আমল পর্যন্ত প্রায় সাত হাজার বছরের ঐতিহ্য। প্রাচীন সভ্যতার বিবর্তন, ধর্ম, শিল্প ও রাজনীতির ধারাবাহিকতা এখানে এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেন দর্শক সময়ের সিঁড়ি বেয়ে ফিরে যান কয়েক হাজার বছর পেছনে।

তুতেনখামুনের সম্পূর্ণ সমাধি প্রথমবার উন্মুক্ত

এই জাদুঘরের সবচেয়ে আলোচিত অংশ হলো প্রাচীন মিশরের বালক রাজা তুতেনখামুনের সমাধি থেকে উদ্ধার হওয়া পূর্ণ সংগ্রহ
১৯২২ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার যে সমাধিটি আবিষ্কার করেছিলেন, তার ভেতরের প্রায় ৫,৫০০ প্রত্নবস্তু প্রথমবারের মতো একই স্থানে প্রদর্শিত হচ্ছে এখানে। সোনার মুখোশ, রাজকীয় সিংহাসন, অলঙ্কার, রথ সব কিছু এমনভাবে সাজানো যে দর্শনার্থীরা যেন শত বছর আগের সেই ঐতিহাসিক আবিষ্কার মুহূর্তটি চোখের সামনে দেখতে পান।

জাদুঘরের সাবেক প্রধান ড. তারেক তওফিক বলেন, “আমরা চাই মানুষ যেন তুতেনখামুনের সমাধি দেখতে পান ঠিক যেভাবে হাওয়ার্ড কার্টার প্রথম দেখেছিলেন—অক্ষত ও অবিকল অবস্থায়।”

নির্মাণে দুই দশকের প্রচেষ্টা

জিইএম-এর প্রস্তাব দেওয়া হয় ১৯৯২ সালে, আর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে। একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তি আর প্রাচীন শিল্পের সংমিশ্রণে তৈরি এই স্থাপনাটি শেষ হতে সময় লেগেছে প্রায় দুই দশক। ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি মার্কিন ডলার। জাদুঘরটির আয়তন প্রায় পাঁচ লাখ বর্গমিটার, যা প্রায় ৭০টি ফুটবল মাঠের সমান। প্রবেশপথটি পিরামিড আকৃতির, দেয়ালে খোদাই করা হয়েছে প্রাচীন মিশরীয় হায়ারোগ্লিফ, আর পুরো ভবনজুড়ে অ্যালাবাস্টার পাথরের ত্রিভুজাকার নকশা স্থাপত্যে এনেছে অনন্য এক আভিজাত্য।

Google News দৈনিক টার্গেটের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল

রামেসিস দ্য গ্রেট ও প্রাচীন রাজাদের উপস্থিতি

প্রবেশের পরই চোখে পড়ে ১১ মিটার উঁচু রামেসিস দ্য গ্রেটের মূর্তি, যেটি ২০০৬ সালে কায়রোর রেলস্টেশন থেকে সরিয়ে এখানে আনা হয়।
‘গ্র্যান্ড স্টেয়ারকেস’ বা বিশাল সিঁড়ির দুই পাশে সাজানো আছে মিশরের অন্যান্য রাজা-রানীর ভাস্কর্য, আর উপরের তলা থেকে দর্শকরা সরাসরি দেখতে পারেন গিজা পিরামিডের অপূর্ব দৃশ্য।

পর্যটন ও অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জাদুঘর বছরে অন্তত আট মিলিয়ন পর্যটক আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে। এর ফলে মিশরের পর্যটন খাত নতুন প্রাণ পাবে।
একই সঙ্গে, জিইএম মিশরের নিজস্ব ঐতিহ্য বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনার দাবিকেও আরও জোরদার করেছে। অনেক গবেষকই মনে করছেন, ব্রিটিশ মিউজিয়ামে থাকা ‘রোসেট্টা স্টোন’ ফেরত আনার আন্দোলন এখন নতুন গতি পাবে।

পিরামিডের পাশে সভ্যতার নতুন প্রতীক

জিইএম-এর স্থাপত্য এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে এটি গিজার তিনটি পিরামিডের সাথে একই সরলরেখায় দাঁড়িয়ে আছে। সূর্যাস্তের সময় পিরামিড আর জাদুঘরের কাঁচে প্রতিফলিত সোনালি আভা যেন প্রাচীন ও আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটায়।

সংস্কৃতি ও উত্তরাধিকার রক্ষায় নতুন ধারা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রত্নতত্ত্ববিদরা বলছেন, এই জাদুঘর শুধু ইতিহাস প্রদর্শনের স্থান নয় এটি মিশরের সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়ের নতুন কেন্দ্রবিন্দু। আধুনিক সংরক্ষণ প্রযুক্তি, ডিজিটাল ইন্টারঅ্যাকটিভ গ্যালারি এবং শিক্ষা-গবেষণার সুযোগ এটিকে করেছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক জীবন্ত পাঠশালা।


সংক্ষেপে বলা যায়
দ্য গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম শুধু একটি ভবন নয় এটি সময়ের সেতুবন্ধন। গিজার বালুকায় দাঁড়িয়ে থাকা এই স্থাপনা মিশরের হাজার বছরের গৌরব, রাজত্ব আর রহস্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে। প্রাচীন সভ্যতার উত্তরাধিকার এখন নতুন রূপে উন্মুক্ত হলো, যা একদিকে ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যদিকে ভবিষ্যতের জন্য প্রেরণা।

WhatsApp

আমাদের WhatsApp চ্যানেল ফলো করুন

ফলো করুন