নির্বাচন কমিশন (ইসি) কয়েক দিনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। এদিনই অনুষ্ঠিত হবে জুলাই সংক্রান্ত গণভোটও। যদিও গ্রামীণ এলাকায় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা তুলনামূলক বেশি, কিন্তু গণভোট সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা এখনও সীমিত। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংসদ নির্বাচনের প্রচারের সঙ্গে গণভোটের প্রচারণা একযোগে চালানোর পরিকল্পনা করছে ইসি।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতিমধ্যেই ইসিকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে, যাতে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট আয়োজন করা যায়। এই উদ্যোগে ইসির মূল লক্ষ্য হলো ভোটারদের মধ্যে গণভোট সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এজন্য নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটি বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ইসি সূত্র জানায়, সম্প্রচারের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে তারা গণভোট বিষয়ক ভিডিও তৈরি করবে এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, বিটিভি ও অন্যান্য মাধ্যমে সম্প্রচার করবে। পাশাপাশি সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ আয়োজন, নির্বাচনী প্রচারণার সঙ্গে গণভোটের প্রচারণা সংযুক্ত করা, টিভিসি, কাউন্টডাউন, স্লোগান, পথনাটক, র্যালি, লিফলেট, পোস্টার এবং বিজ্ঞাপন তৈরি করে ভোটারদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এছাড়া এআই ও ফেক নিউজ শনাক্তকরণ, গুজব প্রতিরোধের জন্য বিটিভিতে ফ্ল্যাশ নিউজ সম্প্রচার এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার বিষয়ে প্রচারণা চালানো হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, ‘গণভোট আইন পাস না হওয়া পর্যন্ত আমরা সরাসরি কাজ শুরু করতে পারব না। আশা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহেই আইনটি পাস হবে। আইন পাশ হলে কমিশন প্রস্তুতি গ্রহণ ও সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করবে। গণভোট হলে চারটি বিষয়ে ভোট গ্রহণ হবে।’
নির্বাচন কমিশনার মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘গণভোটের বিষয়টি আমরা কয়েকদিন আগে থেকে মাথায় এনেছি। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখা যায়নি। রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা থাকলে সুন্দর নির্বাচন সম্ভব হবে।’
সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, ‘সরকার থেকে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি এসেছে। তাতে বলা হয়েছে যে নির্বাচন কমিশন একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করবে।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলেন, ‘যদি কার্যকর প্রস্তুতি নেওয়া হয়, পর্যাপ্ত লোকবল ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা হয়, তবে একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।’ তিনি আরও জানান, ‘ভোটকক্ষ বাড়ানো না হলেও কাজ হবে। তবে ব্যালট গণনার জন্য দুটি আলাদা দল থাকা প্রয়োজন—একটি সংসদ নির্বাচনের জন্য এবং অন্যটি গণভোটের জন্য।’
জেসমিন টুলী বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, গণভোটের জন্য ভোটকেন্দ্রে ব্যালট ইস্যু ও গণনার বিষয়ক প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটেও দুটি ব্যালট বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, ‘এগুলো কোনো চ্যালেঞ্জ নয়, বরং দায়িত্বের অংশ। সঠিকভাবে পরিকল্পনা করলে সব কাজ সহজেই করা সম্ভব।’
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭, মহিলা ভোটার ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ হাজার ২৩৪।
সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে। একই দিনে গণভোটও অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে এবং সংস্থা ভোট আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময় ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ।
দৈনিক টার্গেট 


















